পাকিস্তান, এক ব্যর্থ প্রয়াস
সঞ্জয় সোম।
ভারত আক্রমণে পাশবিকতার শুরুর দিকেই ১১৯৭ সালে সম্পুর্ন অশিক্ষিত এবং নৃশংস, কুখ্যাত এক আফগানি হানাদার বখতিয়ার খিলজি, ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ, ৪২৭ সালে স্থাপিত বিশ্ববিখ্যাত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বীভৎসভাবে ধ্বংস করেছিল। আর তার দীর্ঘ ৬৬০ বছর পর ইংরেজরা খ্রীস্টধর্ম প্রচার আর কোম্পানির-কেরানি তৈরির কারখানা হিসেবে শ্রীরামপুরে এক নতুন কলেজ স্থাপনা করে ১৮১৮ সালে, যেটিকে পরে ১৮২৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে উন্নীত করা হয়। এই যে মাঝের ঔপনিবেশিক-ইসলামিক শাসনের ৬৩২ বছর, যা আসলে ভারতীয় পারম্পরিক, প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চজ্ঞানচর্চার সবচেয়ে বড় দুঃসময়– কেন তাকেই ভারতের ‘স্বর্ণযুগ’ বলে’ বামপন্থী ইতিহাসকাররা মিথ্যা মহিমান্বিত করেন– সেই প্রশ্নের মধ্যেই লুকিয়ে আছে আজকের পাকিস্তানের ব্যর্থতার উত্তর।
যখন ভারতে আর একটাও বিশ্ববিদ্যালয় অবশিষ্ট নেই, ফিরে যাওয়া যাক সেই ভয়ঙ্কর সময়কালে। সেই সময়ে লেখা ব্রহ্মানন্দভারতীকৃত (১৩২০-১৩৮০) একটি মঙ্গলাচরণে দেখা যায়, মা সরস্বতীর বন্দনা করে উনি বলছেন,
পরাপশ্যন্ত্যদিদেহাং প্রণতাভীষ্টদায়িনীম্ ।
সত্যজ্ঞানানন্দরূপাং ধ্যায়ে হ্যাদ্যাং সরস্বতীম্ ।।
এর অর্থ হলো, ‘পরা, পশ্যন্তী, মধ্যমা ও বৈখরী – এই চারিপ্রকার বাণী দিয়ে গঠিত যাঁর দেহ, যিনি বানীর মাধ্যমে অভিব্যক্ত হয়ে প্রণতজনের অভীষ্ট পূর্ণ করেন, যিনি সচ্চিদানন্দ ব্রহ্মের জ্ঞানশক্তিস্বরূপিণী, আমি সেই সরস্বতীকে ধ্যান করি।’
এখন, প্রশ্ন হলো, এই যে চার ধরণের বাণী, এগুলির ব্যবহারিক প্রয়োগ কিভাবে সম্ভব? কুমারসম্ভবের টিকায় (২/১৭) মল্লিনাথ এর ব্যাখ্যা করেছেন, যার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়: জাগ্রত অবস্থায় সর্বজীবশ্রাব্য শব্দোচ্চারণ হলো ‘বৈখরীবাণী’; স্বপ্নাবস্থায় কেবলমাত্র স্বপ্নদ্রষ্টার শ্রুতিগোচর শব্দ ‘মধ্যমাবাণী’; সুষুপ্তাবস্থায় সুখ ও অজ্ঞান প্রকাশিকা বাণী হলো ‘পশ্যন্তী’ আর সমাধি অবস্থায় চৈতন্যরূপিণী নিত্যবাণী হলো ‘পরা’। পৌরাণিক-কালে জ্ঞানদেবীর যত বন্দনা আছে তাতে কিন্তু দেবী অনেক বেশি অভিগম্য, তাঁকে স্বপ্নে বা সুষুপ্ত অবস্থায় অনুভব করতে হয়না। আসলে এই ভয়াবহ সময়টিতে ভারতে হিন্দুদের জ্ঞানচর্চা আর প্রাতিষ্ঠানিক বা বাহ্যিক নয়, অনেকটাই আভ্যন্তরীণ হয়ে পড়তে বাধ্য হয়েছিল।
এত দমনপীড়নের মধ্যেও সনাতন ধর্মের অনুসারীরা কিন্তু তাঁদের সাংস্কৃতিক পরম্পরা থেকে চ্যুত হননি। শিক্ষাগ্রহণ চলেছে, পাঠশালা চলেছে, টোল চলেছে, গুরুকুলও সমানেই চলেছে, বেদান্তচর্চা বা দার্শনিক বিবাদ-সংবাদ কোনোটাই বন্ধ হয়নি। ধারাবাহিকতা বজায় থেকেছে ঠিকই, কিন্তু হয় ব্যক্তিগতভাবে হিন্দু জনগণ বা হিন্দু রাজন্যবর্গ অথবা হিন্দু মন্দিরভিত্তিক অর্থনীতির উদ্যোগে এবং উদ্যমে। যে গভীর জীবনদর্শন প্রাচীনকাল থেকে ঋষিরা নানাভাবে ব্যক্ত করে এসেছেন এবং যা কিছু ঘিরে বহু মনীষী পরবর্তীকালে বিবাদ-সংবাদ ও ব্যাখ্যার মাধ্যমে নানান বৌদ্ধিক পরম্পরা গড়ে তুলেছেন, লক্ষ লক্ষ পুঁথি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েও আগ্রাসী হানাদাররা হিন্দুর বুক থেকে সেই সনাতন ধর্ম সংস্কৃতিকে মুছে ফেলতে পারেনি। আসলে হাজার হাজার বছর ধরে যা এক প্রাচীন সভ্যতার গড়ে ওঠার ভিত্তি হয়ে জাতির গঠনতন্ত্রে মিশে গিয়েছে, তার বিনাশ অত সহজে সম্ভব নয়– যদি সেই জাতির মধ্যে বিন্দুমাত্রও জাত্যাভিমান বেঁচে থাকে। ভারতের কোটি কোটি আম জনতা প্রায় ৮০০ বছর ধরে সেই জাত্যাভিমানকেই বাঁচিয়ে রাখার কাজ করে গেছেন, যার ফলে এতদিন পর ভারত জগৎসভায় তার হারানো জায়গাটি আবার ফিরে পেতে উদ্যোগী হতে পারছে।
এর ঠিক উল্টোপিঠেই আছে এমন এক ভারতীয় জনগোষ্ঠী যাঁরা বিদেশি আগ্রাসী শাসকের অত্যাচার বা প্রলোভন সহ্য করতে না পেরে, নিজেদের অস্তিত্বের মূলে যে সনাতন সংস্কৃতি, তাকেই অস্বীকার করতে শুরু করেছিলেন এবং ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কালের নিয়মে একদিন নিজেদের সভ্যতার ইতিহাসকেই মুছে দিতে প্রয়াসী হয়েছেন। আসলে সংস্কৃতির সাথেই রাষ্ট্র্ববোধ ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং সাংস্কৃতিক রাষ্ট্রবাদ একপ্রকার অবিভাজ্য। যেমন পাড়ার পুজো থেকে পাড়া এবং পুজোকে আলাদা করা যায় না, ঠিক তেমনিই কোনো জাতির সংস্কৃতি থেকে জাতিকে আলাদা করা যায়না– জোর করে ছিন্ন করলে তার ফল ভয়াবহ হতে বাধ্য কারণ গোটা জাতিই তখন পরিচয়-সঙ্কটের শিকার হয়ে পড়ে, যা আজ পাকিস্তানের ক্ষেত্রে হয়েছে। ধর্মের ভিত্তিতে ‘ইসলামিক রিপাব্লিক অফ পাকিস্তান’ তো নাহয় তৈরি হয়ে গেল কিন্তু কেউ একবার ভেবেও দেখলেন না যে যদি ধর্মীয় আইনকেই সর্বোপরি বলে মান্যতা দিতে হয় তাহলে প্রজাতন্ত্রের/রিপাব্লিকের কোনো ভূমিকাই থাকতে পারেনা কারণ অন্য কারো আইনকে ‘সর্বোপরি’ বলে মানে না বলেই-না কোনো দেশ তথা প্রজা নিজে আইনসভা তৈরি করে’ আইন প্রণয়ন করে বলেই প্রজাতন্ত্র/রিপাব্লিক হয়। তাই পাকিস্তান শুরু থেকেই এক সোনার পাথরবাটি।
এখানে ভারতীয় সভ্যতা সংক্রান্ত কিছু মূলভূত প্রশ্ন তোলার প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে, যেগুলির নিরিখে ভারত এবং পাকিস্তানের মানসিকতার পার্থক্য বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। বিশ্ব জুড়ে ৪৯টি মুখ্য সভ্যতার মধ্যে একমাত্র এই হিন্দু সভ্যতাই আজো সগর্বে বেঁচে আছে। কেন, কীভাবে বাঁচলো? কাশীর মহিমা কী, পুষ্করের চরিত্র কী, কাঞ্চীপুরমের ঐতিহ্য কী, কেন তারা আজো প্রাণবন্ত? এই ঐতিহাসিক, চিরায়ত, অন্তর্নিহিত সামাজিক-সাংস্কৃতির ব্যাখ্যা কী? যদি বলেন অন্তর্নিবেশ আর আত্তীকরণের জন্য হিন্দুসভ্যতা চিরনবীন, তাহলে একদিকে হিমালয় আর তিনদিকে ইন্দু মহাসাগর দিয়ে ঘেরা এই ভৌগোলিক হিন্দু ত্রিসীমানার সংস্কৃতি বিদেশিদের আগমন বা আক্রমণের আগে যা ছিল তার থেকে বিচ্যুত হয়েছে কি? কী এমন হলো যে ভারতেরই একটি গোষ্ঠী আজ ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আরবি নাম, আফগানি পোশাক, লখনৌয়ের নবাবদের ভাষা আর তুর্কি-তৈমুরিদ লুটেরাদের নায়কত্বে বরণ করে বংশপরিচয়হীন এক কিম্ভুতকিমাকার কৌম হয়ে দাঁড়িয়েছে?
আচ্ছা, এই প্রাচীন রাষ্ট্রের ভূগোল কি চিরকাল এক ছিল নাকি রাজনৈতিক সীমারেখার সাথে রাষ্ট্রসংস্কৃতির কোনো সম্পর্কই নেই? যদি যৌগিক সংস্কৃতির প্রশ্ন তোলা হয়, অর্থাৎ গঙ্গা-যমুনী তেহেজিব জাতীয় কিছু, তাহলে ৬৮ খ্রিস্টাব্দে যখন আমাদের পূর্বপুরুষ ইহুদিদের আপন করে নিয়েছিলেন, ৪র্থ শতাব্দীতে যখন ক্যানানাইটদের আশ্রয় দিয়েছিলেন আর ৮ম শতাব্দীতে পারসিকদের, তখন যে বসুধৈব কুটুম্বকমের সংস্কৃতি তাঁদের গ্রামৈব কুটুম্বকমের মানসিক সীমানা ছাপিয়ে অনেক উচ্চস্তরে তুলে নিয়ে গিয়েছিল– সেই সংস্কৃতি তবে কাদের? ৫ম শতাব্দীতে কবি ভর্তৃহরি যখন লিখছেন, ‘মাতা মেদিনী, তাত মারুত, সখে তেজ, সুবন্ধু জল, ভাতৃ ব্যোম’ ইত্যাদি, তখন কোন সংস্কৃতি তাঁকে ‘পঞ্চভূতকে আত্মীয়জ্ঞানে’ সম্বোধন করতে উদ্বুদ্ধ করছে?
বিশ্বমানবতার উৎস কোথায়? মানুষ তো কোন ছার, কীট পতঙ্গ পর্য্যন্ত সুখে থাক, নিরোগ থাক, কেউ যেন দুঃখী না হয়, সকল প্রাণীজগৎ– বনস্পতি, ওষধি সহ যেন শান্তিতে থাকে, এই প্রার্থনা কোন সংস্কৃতির দান? ফাদার ইউসেবিয়াসের লেখনী মোতাবেক, খ্রিস্টপূর্ব ৩০০র আশেপাশে যখন সুদূর এথেন্সে গিয়ে একজন হিন্দু বণিক (সম্ভবত চাঁদ সওদাগর) সক্রেটিসকে পার্থিব জীবন আর আধ্যাত্মিক জীবনের পার্থক্য বোঝাচ্ছেন, তখন আত্তীকরণ হচ্ছে না বিকীর্ণকরণ হচ্ছে, ভেবে দেখা প্রয়োজন বৈকি। অভেদবুদ্ধি না ভেদবুদ্ধি, জনগণের অধিকার rights-centric হবে না duty-centric, প্রতিবাদী না প্রতিপক্ষ, সংবাদ না বিবাদ, অর্থ না পরমার্থ ইত্যাদি নানাবিধ বিচার, বিতর্ক এবং বিশ্লেষণ কি শুধুই স্থান-কাল-পাত্র নির্ভর, সংস্কৃতি নির্ভর নয়?
মাঝেমাঝেই পাশ্চাত্য প্রবন্ধে পড়ি, Rome collapsed; আমি মনে করি Rome went out of ideas আর তারপর রোমের অস্তিত্বের সঙ্কট সৃষ্টি হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। আবার সেই মূল প্রশ্নে ফিরতে হয়। প্রতিটি সভ্যতার মূলে তার সংস্কৃতি, যা দীর্ঘদিনের চর্চার মাধ্যমে পরিশীলিত হতে হতে সমাজে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য-উত্তরাধিকার হিসেবে আত্মস্থাপিত হয়। তার সাথে ওতপ্রোতভাবে জুড়ে থাকে আদর্শ জীবনদর্শন, যাকে আমরা এই হিন্দুভূমিতে ‘ধর্ম’ বলি। হিন্দু ভারত তার বিবিধ-বৈচিত্র্যপূর্ণ চিন্তাসূত্রগুলি কেন রোমের মতন হারিয়ে ফেলেনি? যে শিক্ষাব্যবস্থা গোটা জাতির চিন্তাকে একমুখী করে তোলে তার ফলশ্রুতি যে বিধ্বংসী, সে বিষয়ে কারো সন্দেহ থাকা উচিত নয়। ভারতের সৌভাগ্য যে এমন এক জ্ঞানচর্চার ধারাকে সে ধারণ, পোষণ ও বহন করে চলেছে যা তাকে কোনদিনই অশিক্ষিত হতে দেয়নি। পাকিস্তান সেই পরীক্ষিত এবং সফল শিক্ষাপ্রণালীটিকেই বর্জন করেছে।
এবার শেষ তিনটি প্রশ্ন, হিন্দুরাষ্ট্র কী?– জাতীয়তাবাদ আর রাষ্ট্রবাদের মধ্যে সংস্কৃতিকেন্দ্রিকতা কোন অবধারণায় বেশি প্রাসঙ্গিক আর সাংস্কৃতিক রাষ্ট্র্ববাদের সাথে হিন্দুত্বের ঐতিহাসিক এবং ব্যবহারিক– দুটি সম্পর্কই সুদৃঢ় না থাকলে, হিন্দুসংস্কৃতি তথা সভ্যতার স্থায়িত্ব ও ক্রমবিকাশ কীভাবে সম্ভব? হিন্দুত্ব সুরক্ষিত না থাকলে পৃথিবীজুড়ে বহুত্ববাদ ও বিশ্বভ্রাতৃত্বের অস্তিত্ব থাকবে কি? এরই সাথে জুড়ে থাকা আরো একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন: যে জাতি নিজেদের পূর্বপুরুষের সভ্যতা ও সংস্কৃতির শত্রু, অত্যাচারী, ধর্ষক, বিজাতীয় আক্রমণকারীদের নায়ক বলে মনে করে এবং তাদের যশোকীর্তন করে’ গৌরবান্বিত বোধ করে, তারা কি কেবলই আত্মবিস্মৃত নাকি মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত? পাকিস্তান যে ঘৌরি, গজনবী ইত্যাদি লুটেরাদের নায়ক মনে করে, সেটা কি ওরা যা নন নিজেদের তাই জাহির করার complex মাত্র নয়? আরবরা কিন্তু তাদের আদি সংস্কৃতি ভোলেননি, ফলে আজ তারা নিজেদের ভাবধারাকে সংশোধন করতে পারছেন, নিজেদের প্রাচীন তিন দেবীর মন্দির পুনরুদ্ধার করতে বা আরবে হিন্দু মন্দির স্থাপনায় সহায়তা করতে দ্বিধাবোধ করছেন না। উল্টোদিকে পাকিস্তান প্রাচীন শক্তিপীঠ ‘মা সারদা’র মন্দির ধ্বংস করে কফি হাউস বানাতে উদ্যত, কারণ পূজাপদ্ধতির সাথে-সাথে নিজেদের হিন্দুত্বকেও তারা অকারণে বিসর্জন দিয়ে বসে আছেন।
এতগুলো প্রশ্ন উত্থাপনের কারণ হলো আজ ভারতবর্ষের নিরিখে পাকিস্তান যেখানে দাঁড়িয়ে আছে তার বিশ্লেষণের এক প্রেক্ষিত তৈরি করা। সংস্কৃতির সাথেই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে ভাষা এবং জ্ঞানচর্চা। প্রথমে ভাষার কথাই ধরা যাক। ভাষা আর ঔপনিবেশকতার মধ্যে একটা মস্ত সম্পর্ক আছে– দুটিকেই ব্যবহার করে অন্যের নিজস্ব পরিচয় মুছে দেওয়া যায়। কোনো ভাষীর কাছ থেকে তার ভাষা ছিনিয়ে নিতে পারলে যত তাড়াতাড়ি এবং যতটা পরিপূর্ণভাবে তাকে বশ করা যায়, গোলাবারুদ, সৈন্যসামন্ত দিয়ে ঠিক তেমনটা কখনো করা যায়না। বস্তুত ভাষার সংরক্ষণ আর স্বাধীনতা এক এবং অভিন্ন। যদি মাতৃভাষাকে বাঁচাতে না পারা যায়, জাতির পক্ষে নিজস্বতা অক্ষুন্ন রাখা অসম্ভব এবং নিষ্ফলা অনুকরণের ফলে তখন এমন এক অদ্ভুত পরিচয়-সঙ্কট সৃষ্টি হয় যা প্রজন্মের পর প্রজন্মকে জাত্যাভিমানহীন, স্থায়ী পরমুখাপেক্ষিকতার দিকে ঠেলে দেয়।
ভাষা মানুষের দুঃখের, সুখের, রেগে যাওয়ার, গর্জে ওঠার, ভালোলাগার, ভালোবাসার, ঘৃণার, আঘাত করা এবং আঘাত পাওয়ার– বস্তুত তার অস্তিত্বের ভিত্তি, পূর্বপুরুষের সাথে যোগাযোগের সাধন। এ সেই পড়ে পাওয়া ধন যা তার চিন্তার, তার নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলার, সহভাষীদের সঙ্গে আলাপচারিতার আর অন্য ভাষায় আলাপচারিতার সময়, অবচেতনে নিজের মতো করে আত্মসাৎ করার উপায়। ভারতের যে গোষ্ঠীটি নিজেদের সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে অস্বীকার করে পাকিস্তান গঠন করেছিলেন, প্রথমেই তারা নিজেদের প্রাদেশিক মাতৃভাষাগুলিকে জলাঞ্জলি দিয়ে একটি কৃত্রিম ভাষাকে অবলম্বন করে নিজেদের পরিচয় গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন কারণ তারা যা নন তা হওয়ার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছিলেন। এটাই পরবর্তীকালে পাকিস্তানের বিভাজন এবং এখনকার ব্যর্থ-রাষ্ট্র হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণও বটে।
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো জ্ঞানচর্চা। শুরুতেই যে কথা বলা হয়েছিল, তারই পুনরাবৃত্তি করে বলতে হয় যে বেশ কয়েক দশক ধরে পাকিস্তানে একটিও নতুন আধুনিক শিক্ষাকেন্দ্র তৈরি হয়নি এবং গোটা শিক্ষাব্যবস্থাটাই ধর্মীয় শিকলে আবদ্ধ হয়ে, ১৪০০ বছর পিছিয়ে গিয়ে, যৌক্তিকতাকে জলাঞ্জলি দিয়ে, অন্ধবিশ্বাসনির্ভর হয়ে পড়েছে– যেখানে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া পাকিস্তানিদের নিজস্ব হিন্দুসভ্যতার উন্নত বৈজ্ঞানিক চেতনা এবং উদারনৈতিক অনুসন্ধিৎসার আর কোনো স্থান নেই। অদ্ভুত বিষয় হলো, যারা ভারত আক্রমণ করে ধর্ম পরিবর্তন করিয়েছিল, সেই দেশগুলো কিন্তু আজ মৌলবাদের ভূতকে ঝেড়ে ফেলে আধুনিক বিশ্বের সাথে সম্পৃক্ত হতে চাইছে আর ভারতীয় উপমহাদেশের যে গোষ্ঠীর ওপর তারা এই বিজাতীয় মৌলবাদ চাপিয়ে দিয়ে গিয়েছিল, তাঁরা এখন আসলের-চেয়েও-বড়-আসল হওয়ার দৌড়ে সামিল হয়েছেন।
ব্রিটিশদের কব্জায় থাকা প্রাচীন হিন্দুভূমি ভারতবর্ষ কেবলমাত্র বিজাতীয় মুসলমানদের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক আধিপত্য স্থাপনের তাগিদেই ভাগ করা হয়েছিল, অন্য কোনো কারণে নয়, সেটা বোঝার মতন চিন্তাশক্তি আর পাকিস্তানে অবশিষ্ট নেই। ফলে, ভারতীয়রা যখন কারিগরি শিক্ষাকে প্রধান হাতিয়ার করে বিশ্বজয়ের যুদ্ধে নেমেছেন, পাকিস্তানিরা এখনো এটম বমেই আটকে আছেন। জাতি ছাড়া সভ্যতা নেই, আবার জাতি ছাড়া জাতীয়তাবোধও নেই। ফলে সভ্যতা যতই উন্নত, বহির্মুখী, আহ্বায়ক এবং বহুত্ববাদী হোক না কেন, কোথাও না কোথাও তা সেই ‘জাতিসত্তা’র সমষ্টিগত সদা-শিক্ষার্থী উন্মুক্ত মানসিকতারই পরিচায়ক, যেটা তার বিমিশ্র সংস্কৃতিও বটে। কুশিক্ষার ফলে পাকিস্তান সেই বোধটাই আজ হারিয়ে ফেলেছে।
ধর্ম, সমাজনীতি, রাজনীতি এবং অর্থনীতি কোনোটাই পরষ্পর-বিচ্ছিন্ন নয়, একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। আর সর্বব্যাপী হলো ইতিহাস, যা ভূতকালের কীর্তির ভিত্তিতে ভবিষ্যৎকে আরো সমৃদ্ধ করার প্রেরণা জোগায়। উদাহরণস্বরূপ, ঋগ্বেদ এবং অথর্ববেদে বর্ণিত গণতান্ত্রিক সভা সমিতি ও সংসদ ব্যবস্থা, কৌটিল্যর অর্থশাস্ত্রে লিপিবদ্ধ অর্থনৈতিক ও ব্যবহারিক সূত্রসমূহ এবং শ্রীচৈতন্যের প্রবর্তিত সামাজিক-সাম্যবাদ– আধুনিক ভারতের উন্নয়নের ভিত্তি তো নিশ্চয়, ভবিষ্যতের পাথেয়ও বটে। ফলে, ইতিহাসকে অস্বীকার করলে দিশাহীন অবস্থা হয়, আখেরে লাভের লাভ কিছুই হয়না– যে দুরবস্থা আজ পাকিস্তানের হয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে পাকিস্তান আজ দেউলিয়া হওয়ার মুখে। ইদানিংকার যে কোনো রাতের উপগ্রহ চিত্র দেখলেই বোঝা যায় পাকিস্তানের কী দুর্দশা– সারা ভারত, মায় বাংলাদেশ পর্য্যন্ত আলোয় ঝলমল করছে; আর গোটা পাকিস্তান, পাশের অনুন্নত আফগানিস্তানের মতোই অন্ধকার!
এই নিয়ে পরপর তিনবছর লাগাতার পাকিস্তানের পাওয়ার-গ্রিড fail করলো, যা বিশ্বের এক প্রযুক্তিগত-বিস্ময়ই বটে। এই যে হিন্দুদের সঙ্গে থাকতে পারব না বলে এঁরা এত লাফিয়েছিলেন, হিন্দুরা তো বাকি সকলকে সাথে নিয়ে দেখতে-দেখতে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম অর্থনীতি তৈরি করে ফেললেন; আর এঁরা স্বাধীনতার সময়কার সেই অন্ধকারেই পচে মরছেন! এক ইউনিট বিদ্যুতের দাম সর্বোচ্চ ৬৫ রুপিয়া, একটা রুটির দাম ৪৫ রুপিয়া, চিকেন ৫২৭ রুপিয়া/কেজি, খাবার জন্য আটা নেই, চাল নেই, সবজি নেই, রান্নার জন্য গ্যাস নেই, পেট্রোল নেই, বিদেশিমুদ্রা নেই, রেপোরেট ১৭%, এটম বোমের চাবি পর্য্যন্ত নিজেদের হাতে নেই, একমাত্র একগাদা মৌলবাদী ছাড়া গোটা দেশে কিছুই তো আর নেই– আখেরে জোর করে বাপঠাকুর্দার মাতৃভূমিকে ভেঙে বেরিয়ে গিয়ে, আলাদা দেশ তৈরি করে লাভটা কী হলো? গজওয়া-এ-হিন্দ তো হলোই না, রিয়াসতে মাদিনাও হলো না, উল্টে হিন্দু-ইহুদি-বিদ্বেষের যাঁতাকলে পিষে পাকিস্তান প্রস্তরযুগে পৌঁছে গেল।
পাকিস্তানে কি ধর্মবোধ আছে? যেভাবে জোর করে সংখ্যালঘু শিশু এবং কিশোরী কন্যাদের ধরে নিয়ে গিয়ে ধর্মান্তরণ করিয়ে, বাবার বয়সী পুরুষের সাথে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়, যেভাবে অন্য ধর্মমতাবলম্বীদের উপাসনাস্থল এবং মন্দির ভাঙা হয়, যেভাবে ধর্মের নামে ভিড়, নিরীহ মানুষকে অবাধে আক্রমণ ও খুন করে, যেভাবে জোতদার এবং জমিদাররা গরীবকে শোষণ করে, যেভাবে ফৌজ গণতন্ত্রকে হত্যা করে, যেভাবে মোল্লা-মৌলানারা মুক্তচিন্তার ওপর অঙ্কুশ লাগায়, যেভাবে গোটা দেশ কীভাবে একে অপরকে ঠকাবে, সেই চিন্তায় মশগুল হয়ে থাকে– তাতে মনে তো হয়না যে পাকিস্তানে আর তিলমাত্র ধর্মবোধ অবশিষ্ট আছে। অথচ এই ধর্মই হলো সনাতন ভারতের উন্নত জীবনদর্শনের ভিত্তি। ধর্ম মানে কিন্তু মতবাদ বা বিশ্বাস নয়। মহান সন্ত স্বামী করপাত্রীজি মহারাজ ধর্মকে এইভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন, ‘ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র এবং বিশ্বকে ধারণ, পোষণ করা ও সংগঠন, সামঞ্জস্য, শান্তি সুব্যবস্থার স্থাপনাতে যা অত্যন্ত উপযুক্ত হয় আর পরিণামেও যা হিতকর হয়, সেই প্রকার নিয়মকেই ধর্ম বলা হয়’। পাকিস্তান বাস্তবিকই ধর্মহীন।
এই নিবন্ধকে আর বেশি দীর্ঘায়িত না করে শেষ বিষয়টির ওপর নজর দেওয়া যাক– জাতীয়তাবাদ। এটি একদিকে যেমন প্রাচীন বহুত্ববাদী সংস্কৃতিকে রক্ষা করে, তেমনই অন্যদিকে বৃহত্তর পটভূমিতে জগতের কল্যাণের জন্য জাতিকে সঙ্ঘবদ্ধও করে। একমাত্র এই ধরণের মানবিক মানসিকতার প্রচার এবং প্রসার হলেই বিশ্বে সহিষ্ণুতা এবং বহুত্ববাদ স্থায়ী হয়। জাতীয়তাবাদ আবার রাষ্ট্রচেতনারও জন্ম দেয় এবং রাষ্ট্র শক্তিশালী না হলে তার সভ্যতাকে রক্ষা করা প্রায় অসম্ভব– এই বোধ তার মধ্যে জেগে ওঠে। উল্টোদিকে, মৌলবাদী ভাবধারাও আছে যা বস্তুতপক্ষে বর্বর, একটেরে, শৃঙ্খলার নামে মানুষকে দমন করে রাখার তন্ত্র। এই ধরণের অপসংস্কৃতির প্রসার হলে পৃথিবী অমানবিক এবং অবিবেচক হয়ে পড়ে, ইতিহাসে যার ভুরিভুরি নিদর্শন আমরা দেখতে পাই।
ফলে জাতীয়তাবাদ খারাপ আর উম্মা ভালো বলে যে লেফ্ট-ইসলামিক ন্যারেটিভ মানুষকে গেলানোর চেষ্টা করা হয়, সেটা জাতিকে বা সভ্যতাকে অত্যন্ত সংকীর্ণ একটি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখারই ফসল। জাতির পরিচয় তার সভ্যতা নির্ণয় করে। আর জাতির পরিচয়ই জাতীয়তাবাদ। ফলে, ভারতে যখন হিন্দু জাতীয়তাবাদের কথা বলা হয়, সেটা আদপে হিন্দু সভ্যতা থেকে উদ্ভূত এক বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি, যার আবরণটি বিশ্বমানবিকতার আর অন্তঃস্থলে ধর্ম। এই জাতিসত্তারই বাহ্যিক রূপ হিন্দুরাষ্ট্র। প্রত্যেক রাষ্ট্রের একটি নির্দিষ্ট চরিত্র আছে এবং একটি নির্দিষ্ট ভূমিকাও আছে। হিন্দুরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য আবহমানকাল থেকে অপরিবর্তিতই আছে। ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে এই জাতীয়তাবাদের ভিন্ন ব্যাখ্যাই হলো অন্যতম মূল পার্থক্যসৃষ্টিকারী বিষয়– ভারত হিন্দু, বিশ্বজনীন আর পাকিস্তান আত্মপরিচয়বিহীন কারণ সে তার হিন্দু পরিচয়কে অস্বীকার করেছে। ফলে যাঁরা পাকিস্তানের শাসকশ্রেণীর বেয়নেটের বশীভূত, দল নির্বিশেষে তাঁরা কেউই দেশভক্ত নন, সবাই ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে ক্ষমতাকে অপব্যবহার করছেন এবং প্রত্যেকেরই সম্পদ দেশে নয়, বিদেশে গচ্ছিত।
স্বামী বিবেকানন্দ বলছেন, “ব্যক্তির পক্ষে যেমন, প্রত্যেক জাতির পক্ষেও তেমনি জীবনের একটি বিশেষ উদ্দেশ্য থাকে। উহাই তাহার জীবনের কেন্দ্রস্বরূপ। উহাই যেন তাহার জীবন-সঙ্গীতের প্রধান সুর, অন্যান্য সুর যেন সেই প্রধান সুরের সহিত সঙ্গত হইয়া ঐকতান সৃষ্টি করিতেছে। কোন দেশের— যথা ইংলণ্ডের জীবনীশক্তি ‘রাজনৈতিক অধিকার’; ‘কলাবিদ্যার উন্নতি’ই হয়তো অপর কোন জাতির জীবনের মূল লক্ষ্য। ভারতে কিন্তু ধর্ম জাতীয় জীবনের কেন্দ্রস্বরূপ, উহাই যেন জাতীয় জীবন-সঙ্গীতের প্রধান সুর। আর যদি কোন জাতি তাহার এই স্বাভাবিক জীবনীশক্তি— শত শতাব্দী ধরিয়া, যেদিকে উহার বিশেষ গতি হইয়াছে, তাহা পরিত্যাগ করিতে চেষ্টা করে এবং যদি সেই চেষ্টায় কৃতকার্য হয়, তবে তাহার মৃত্যু নিশ্চয়।… এই জগতে প্রত্যেক মানুষ নিজ নিজ পথ বাছিয়া লয়; প্রত্যেক জাতিও সেইরূপ। আমরা শত শত যুগ পূর্বে নিজেদের পথ বাছিয়া লইয়াছি, এখন আমাদিগকে তদনুসারে চলিতেই হইবে” (বাণী ও রচনা, ৫।১০৯)।
স্বামীজী আরো বলেছেন, “এখন বুঝতে পারছ তো, এ রাক্ষসীর প্রাণপাখিটি কোথায়?— ধর্মে। সেইটির নাশ কেউ করতে পারেনি বলেই জাতটা এত সয়ে, এখনও বেঁচে আছে। আচ্ছা, একজন দেশী পণ্ডিত বলেছেন যে, ওখানটায় প্রাণটা রাখবার এত আবশ্যক কী? সামাজিক বা রাজনৈতিক স্বাধীনতায় রাখ না কেন?— যেমন অন্যান্য অনেক দেশে। কথাটি তো হলো সোজা।… আসল কথা হচ্ছে, যে নদীটা পাহাড় থেকে ১০০০ ক্রোশ নেমে এসেছে, সে কি আর পাহাড়ে ফিরে যায়, না যেতে পারে? যেতে চেষ্টা যদি একান্ত করে তো ইদিক উদিকে ছড়িয়ে পড়ে মারা যাবে, এইমাত্র। সে নদী যেমন করে হোক সমুদ্রে যাবেই— দু-দিন আগে বা পরে, দুটো ভাল জায়গায় মধ্য দিয়ে, না হয় দু-একবার আঁস্তাকুড় ভেদ করে। যদি এ দশ-হাজার বৎসরের জাতীয় জীবনটা ভুল হয়ে থাকে তো আর এখন উপায় নেই, এখন একটা নতুন চরিত্র গড়তে গেলেই মরে যাবে বই তো নয়” (বাণী ও রচনা, ৬।১৬০)।
পাকিস্তান কেন এক ব্যর্থ প্রয়াস? কারণ নিজের ইতিহাস ও সংস্কারকে অস্বীকার করার সাথে সাথে পাকিস্তান স্বাভাবিকভাবেই উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া হিন্দুসভ্যতার ধর্মবোধকেও খুইয়ে বসে আছে। যে জাতির ইতিহাস নেই তার ভবিষ্যৎও নেই। আর যার ধর্মবোধ নেই, তার অস্তিত্বের মূল ভিত্তিটাই নেই। ফলে এই ধরণের অবিবেচক, পরমুখাপেক্ষী যে কোনো সত্তার পক্ষেই আভ্যন্তরীণ টানাপোড়েনের ফলে, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খণ্ডে বিভাজিত হওয়া একপ্রকার অনিবার্যই বটে। বস্তুত, শুরু থেকেই সামাজিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে এবং বিশ্বনাগরিক হিসেবে পাকিস্তান তার ভূমিকা পালনে ব্যর্থ কারণ ঔপনিবেশিক শক্তি দ্বারা সংগঠিত একটি কৃত্রিম নির্মাণ বৈ এই ধর্মান্ধ, প্রত্যয়হীন, পশ্চাদমুখী দেশটি আর বেশি কিছুই নয়। এতদিন পাকিস্তান তার ভূরাজনৈতিক অবস্থানের জন্য কিছু ক্ষমতাবান দেশের ভিক্ষার জোরে টিকে ছিল; এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাঁচতে চাইলে, পাকিস্তানকে ভারতীয়ত্বের মূল স্রোতে ফিরে আসতেই হবে– নচেৎ পাকিস্তানের মৃত্যু নিশ্চিত।